হামজা ঝলকে ভুটানকে হারাল বাংলাদেশ

জাতীয় স্টেডিয়ামে ফিরেই ২-০ গোলের দাপুটে জয়, দারুণ অভিষেক হামজা চৌধুরীর

BANGLADESH MEN'S FOOTBALL

ফাহিম লিংকন

6/5/20251 min read

ঢাকা – গ্যালারিভর্তি ১৬ হাজার দর্শকের চোখ ছিল এক নামের দিকেই—হামজা চৌধুরী। জাতীয় দলের ঘরের মাঠে অভিষেকেই মাঝমাঠের এই তারকা যেন সবাইকে মুগ্ধ করলেন। ম্যাচের শুরুতেই দুর্দান্ত এক হেডে গোল করে ভুটানের বিপক্ষে ২-০ গোলের জয় এনে দেন লাল-সবুজদের।

ফিফা প্রীতি ম্যাচে বুধবার ভুটানের বিপক্ষে জয়ের নায়ক ছিলেন ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগ থেকে আসা এই ফুটবলার। শিলংয়ে ভারতের বিপক্ষে মার্চে আন্তর্জাতিক অভিষেকের পর এটি ছিল তার প্রথম ঢাকার মাঠে খেলা। সেই অভিষেকেই করলেন গোল, তৈরি করলেন একাধিক সুযোগ—আর পেলেন গ্যালারিভর্তি সমর্থকদের প্রবল ভালোবাসা।

শুরুতেই গোল, প্রথমার্ধেই প্রভাব
ম্যাচের ৬ মিনিটেই জেমাল ভূঁইয়ার কর্নার থেকে দুর্দান্ত এক হেডে গোল করেন হামজা। সেই গোলেই লিড নেয় বাংলাদেশ। প্রথমার্ধে ৪৫ মিনিটে প্রতিটি পাস, ট্যাকল আর বল কন্ট্রোলে হাততালিতে ফেটে পড়েছে স্টেডিয়াম। বিরতির পর কোচ তাকে তুলে নেন, কিন্তু সেই অল্প সময়েই তিনি রেখে গেছেন গভীর ছাপ।

সোহেলের গোল, জয় নিশ্চিত
দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতেই বাংলাদেশের দ্বিতীয় গোলটি আসে মিডফিল্ডার সোহেল রানার পা থেকে। বক্সের বাইরে থেকে বাঁ পায়ের নিখুঁত কার্ভ শটে বল জালে জড়ান তিনি। এরপর বাকিটা সময় ব্যবধান ধরে রেখে স্বস্তির জয় পায় স্বাগতিকরা।

প্রায় পাঁচ বছর পর নবনির্মিত জাতীয় স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত প্রথম আন্তর্জাতিক ফুটবল ম্যাচে এ জয় যেন ফিরে আসার বার্তাই দিল বাংলাদেশের ফুটবলে।

দুই কোচের মুখেই হামজা প্রশংসায় পঞ্চমুখ
ম্যাচশেষে বাংলাদেশ কোচ জাভিয়ার ক্যাবরেরা বলেন, “প্রথমার্ধে হামজার প্রভাব ছিল দারুণ। শুরুতেই তিনি ম্যাচে ছাপ ফেলেছেন। তার মতো মানসম্পন্ন খেলোয়াড় থাকলে সেটা স্পষ্ট বোঝা যায়। তবে শুধু সে-ই নয়, বাকিরাও ভালো খেলেছে। ভুটান ছিল কঠিন প্রতিপক্ষ, তাই জয়ের ধরণটাও ভিন্ন ছিল।”

ভুটান কোচ আতসুশি নাকামুরাও বলেন, “শুধু গোল নয়, হামজা অনেক দিকেই অবদান রেখেছেন। সে দুর্দান্ত একটি সংযোজন বাংলাদেশের দলে। আমাদের জন্য ম্যাচটা কঠিন ছিল—শুধু হামজার জন্য নয়, বাংলাদেশের বাকি খেলোয়াড়রাও চমৎকার পারফরম্যান্স করেছে। গতবার থিম্পুতে যাদের বিপক্ষে খেলেছিলাম, তাদের চেয়ে এবার বাংলাদেশ অনেক উন্নত।”

নতুন তিন মুখেও সন্তুষ্ট কোচ
ক্যাবরেরা প্রশংসা করেন তিন অভিষিক্ত খেলোয়াড়—ফাহামেদুল ইসলাম, তাজ উদ্দিন ও আল আমিনের। বিশেষ করে ফাহামেদুলের ব্যাপারে বলেন, “শুরুর দিকে একটু নার্ভাস ছিল, কয়েকটা পাস দেওয়ার পরই সে খেলার মধ্যে চলে আসে। শুধু বল পায়ে নয়, মানসিকতায় ও কাজের গতিতেও সে অনেক ভালো করেছে। এই পারফরম্যান্স তাকে আগামী ম্যাচে বেশি সময় খেলার সুযোগ এনে দিতে পারে।”

সামনে সিঙ্গাপুর, বাড়ছে প্রত্যাশা
ক্যাবরেরা আরও বলেন, “আজ আমরা দুই গোল করেছি—দুটিই মিডফিল্ডারদের কাছ থেকে। কতটা সুযোগ তৈরি করেছি, তা গুনে বলা কঠিন, কিন্তু অনেক ছিল। আমি বেশি চিন্তিত হতাম যদি আমরা সুযোগই না বানাতে পারতাম। সামগ্রিকভাবে সবাই ভালো খেলেছে।”

বাংলাদেশ এখন তাকিয়ে রয়েছে এএফসি এশিয়ান কাপ বাছাইয়ের গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচের দিকে। আগামী ১০ জুন একই ভেন্যুতে প্রতিপক্ষ সিঙ্গাপুর। হামজা চৌধুরীর মতো তারকার ঝলকে এই ম্যাচে আরও বড় কিছু আশা করতেই পারে বাংলাদেশ।