সিংগাপুরের কাছে হেরে গেল বাংলাদেশ

২-১ গোলের পরাজয়, এশিয়ান কাপ বাছাইয়ে কঠিন পথ, শেষ পর্যন্ত লড়াকু পারফরম্যান্স যথেষ্ট হলো না।

BANGLADESH MEN'S FOOTBALL

ফাহিম লিংকন

6/10/20251 min read

আবেগ আর প্রত্যাশায় মোড়ানো এক ম্যাচে বাংলাদেশ খুব কাছাকাছি গিয়ে হেরে গেল সিংগাপুরের কাছে। এশিয়ান কাপ বাছাইপর্বের দ্বিতীয় ম্যাচে ২-১ গোলের ব্যবধানে হার মানতে হলো লাল-সবুজের দলকে। দুই ম্যাচে মাত্র এক পয়েন্ট নিয়ে এখন টিকে থাকতে হলে বাকি ম্যাচগুলোতে ঘুরে দাঁড়ানো ছাড়া উপায় নেই।

দিনটি শুরু হয়েছিল উৎসবমুখর পরিবেশে। ম্যাচ শুরুর কয়েক ঘণ্টা আগেই ঢলে পড়েন বাংলাদেশি সমর্থকেরা। স্টেডিয়ামের চারপাশে মুখরিত হয়ে ওঠে “বাংলাদেশ! বাংলাদেশ!” স্লোগানে। বাদ্যযন্ত্র, ফ্লেয়ার আর লাল-সবুজ পতাকায় ঢেকে যায় আশপাশের এলাকা—একটি রঙিন উৎসবে পরিণত হয় পুরো পরিবেশ।

প্রথমার্ধের শুরুতেই সেই উচ্ছ্বাস মাঠেও ছড়িয়ে পড়ে। আগ্রাসী শুরু করে বাংলাদেশ। প্রথম ২০ মিনিটে ফাহামিদুল ইসলাম ও শাকিল আহাদের দারুণ মিডফিল্ড নিয়ন্ত্রণে বেশ কয়েকটি আক্রমণ তৈরি হয়। রাকিব হোসেনের পায়ে আসে গোলের সুযোগ, তবে তিনবার পরিষ্কার সুযোগ পেয়েও লক্ষ্যভ্রষ্ট হন এই ফরোয়ার্ড।

ধীরে ধীরে ম্যাচে ফেরে সিংগাপুর। তাদের কয়েকটি দ্রুত কাউন্টার অ্যাটাক কিছুটা অস্থিরতা তৈরি করে বাংলাদেশের রক্ষণে। তবে তারাও গোলের সামনে সঠিক ফিনিশিং করতে ব্যর্থ হয়।

২৭ মিনিটে ম্যাচের প্রথম হলুদ কার্ড দেখেন ফাহামিদুল ইসলাম, মাঝমাঠে প্রতিপক্ষের জার্সি টেনে ধরায় শাস্তি পান তিনি।

রক্ষণভাগের খেলোয়াড় তারিক কাজীর জন্য ছিল কঠিন এক রাত। প্রথমার্ধে মুখে চোট পেয়ে রক্তপাত হয়, মাঠেই প্রাথমিক চিকিৎসা নেন। কিছুক্ষণ পর আবারও পড়ে যান দ্বিতীয় ধাক্কায়, তবে খেলা চালিয়ে যান সাহসিকতার সঙ্গে।

অবশ্য দুই দলই প্রথমার্ধে সুযোগ তৈরি করেছিল। সিংগাপুর অধিনায়ক বক্সের মধ্যে বাঁ পায়ের শটে এগিয়ে যেতে চেয়েছিলেন, কিন্তু গোলরক্ষক মিতুল মারমা চমৎকার রিফ্লেক্সে গোল বাঁচান। অন্যদিকে শমিত শোমের নিচু ক্রসে গোলের সামনে বল পেয়ে যান রাকিব, কিন্তু আবারও ব্যর্থ।

শমিত শোম ছিলেন দলের অন্যতম উজ্জ্বল পারফরমার। অন্তত পাঁচটি আক্রমণ গড়েছেন তিনি, পাস ও ক্রসে ছিলেন নিখুঁত, কিন্তু ফিনিশিংয়ের অভাব পুরো দলকে হতাশ করে।

৪৪তম মিনিটে আসে সিংগাপুরের গোল। বাংলাদেশের ডি-বক্সে একটি ক্রস ক্লিয়ার করতে ব্যর্থ হন গোলরক্ষক মিতুল। বল ঘুরে চলে যায় বাঁ দিকের পোস্টে, সেখানেই অপেক্ষায় ছিলেন সিংগাপুরের সং উই-ইয়ং। হামজা চৌধুরীর আপ্রাণ দৌড় ও ট্যাকল ব্যর্থ করে তিনি বল জালে পাঠান—সিংগাপুর এগিয়ে যায় ১-০ ব্যবধানে।

দ্বিতীয়ার্ধে বাংলাদেশ আবারও সক্রিয় হয়ে ওঠে, কিন্তু ৫৯ মিনিটে আরও একটি গোল খেয়ে বসে। বক্সে নেওয়া শটে মিতুল প্রথমে বল ঠেকালেও রিবাউন্ড চলে যায় ইখসান ফান্ডির পায়ে, যিনি গোলরক্ষকের বিপরীত দিকে সহজেই বল পাঠান জালে। সেই সময় ফার পোস্টে কাভার দিতে না পারায় অধিনায়ক টপু বর্মনের অবস্থান নিয়ে প্রশ্ন উঠতে পারে।

তবু বাংলাদেশ হাল ছাড়েনি। ৬৭ মিনিটে অবশেষে সাড়া দেন রাকিব হোসেন। হামজা চৌধুরীর নিখুঁত পাস ধরে শীতল মাথায় বল জালে পাঠিয়ে ব্যবধান ২-১ করেন তিনি।

গোলের পর বাংলাদেশ নতুন করে জ্বলে ওঠে। একের পর এক আক্রমণে এগিয়ে যেতে চাইলেও গোলের সামনে বারবার ব্যর্থ হয় ফরোয়ার্ডরা। শমিত ও হামজার দারুণ খেলোয়াড়ি নির্মাণ যথেষ্ট ছিল না সমতায় ফেরার জন্য।

শেষ বাঁশির সঙ্গে সঙ্গেই থেমে যায় বাংলাদেশের স্বপ্ন। ভালো খেলেও হার মেনে নিতে হয়। গোল মিস আর রক্ষণে ভুলের খেসারত দিতে হলো লাল-সবুজের দলকে। দুই ম্যাচে মাত্র এক পয়েন্ট নিয়ে এখন বাছাইপর্বে সামনে কঠিন পথ পাড়ি দিতে হবে তাদের। সম্ভাবনা ছিল, চেষ্টা ছিল, কিন্তু সেগুলো যথেষ্ট নয়—এই পর্যায়ে জয় পেতে হলে চাই ধারাবাহিক ফলাফল ও নিখুঁত এক্সিকিউশন।

তথ্যসূত্র: দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড